গতিপথ পাল্টে বাংলাদেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে নতুন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার তুর্ক। সেই সঙ্গে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখতে চেয়েছেন তিনি। সোমবার সন্ধ্যায় জেনেভাস্থ অফিস অব দ্য হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর) প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হাইকমিশনারের ওই আহ্বান তুলে ধরা হয়। সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠন হতে যাওয়া বাংলাদেশের পরবর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে প্রদত্ত ওই বিজ্ঞপ্তিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান তুর্ক বিরোধী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের ওপর সহিংসতা ও দমন-পীড়নের কারণে বাংলাদেশে রোববারের নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হওয়াকে পীড়াদায়ক বলে উল্লেখ করেন। ভলকার তুর্ক বলেন, ভোটের আগে কয়েক মাস ধরে হাজার হাজার বিরোধী সমর্থককে গণগ্রেপ্তার বা ভয় দেখানো হয়েছে। এই ধরনের কৌশল সত্যিকারের নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য মোটেও সহায়ক নয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান বলেন, এ কারণে আমি বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে এবং দেশে একটি সত্যিকার অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য আবশ্যক শর্তগুলো জোরদারের পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।
হাই কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভোটের আগে গণগ্রেপ্তার, হুমকি, বলপূর্বক গুম, ব্ল্যাকমেইল এবং আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের ব্যাপকভিত্তিক নজরদারি জোরদার করার কারণে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ভোট বয়কট করেছে। রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে বিরোধী দলগুলোর অগ্নিসংযোগের ঘটনাও রয়েছে বলে রিপোর্ট করা হয়েছে৷ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত বছরের ২৮শে অক্টোবর থেকে প্রায় ২৫ হাজার বিরোধী সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে শীর্ষ নেতারাও রয়েছেন। গত দুই মাসে অন্তত ১০ জন বিরোধী সমর্থক নিরাপত্তা হেফাজতে মারা গেছেন বা নিহত হয়েছেন। বিরোধীদের ওপর সম্ভাব্য নির্যাতন বা আটকের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার (মানবাধিকারের রক্ষক) অনেকে আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। বিশেষ করে নভেম্বরে যখন কয়েক ডজন সন্দেহভাজনকে বলপূর্বক গুমের শিকার হতে হয়েছে মর্মে রিপোর্ট হয়েছে। ভলকার তুর্ক বলেন, উপরুল্লিখিত উদ্বেগজনক ঘটনাগুলো স্বাধীনভাবে তদন্ত করা উচিত। দায়ীদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তিনি বলেন, প্রচারণার সময় এবং নির্বাচনের দিনেও মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অনিয়মের যেসব ঘটনা ঘটেছে তারও পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং কার্যকরভাবে তদন্ত করা উচিত। কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল জানিয়ে হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, কিন্তু এটি এখন কসমেটিক বা প্রসাধনী হওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান তার বিবৃৃতির সমাপনীতে বলেন, আমি আন্তরিকভাবে আশা করি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রেও এটি সত্যি হবে। তা না হলে সকল বাংলাদেশির ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *