১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে মুক্তিযুদ্ধের চালিকাশক্তি সংসদীয় গণতন্ত্র ছিল কাগজে কলমে। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার হাত ধরে দেশ আবারও সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে পায়। ৬ ডিসেম্বর নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকার পতনের পর বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের প্রেসিডেন্সিয়াল শাসনামলে ১৯৯১ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। ১৯৯১ সালের নির্বাচন দেশ-বিদেশে নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন হিসেবে প্রশংসা পায়। কিন্তু শেখ হাসিনা নিজের মান বাচাতে সেটাকে সুক্ষ্ম কারচুপির নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী বি এন পি সংবিধান অনুযায়ী বিরোধী দল ছাড়াই নির্বাচন দিয়ে আবারও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় কিন্তু আওয়ামী লীগ তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক গোলাম আযম স্যারের ফর্মুলা অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন করে কিছুদিনের মধ্যেই নির্বাচন দিতে খালেদা জিয়াকে বাধ্য করে।
পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অধিক আসনে জয় পেয়ে ১৪ দলীয় জোট সরকার গঠন করে।
তত্ত্বাবধায়কের একই ফর্মুলায় ২০০১ সালে ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে চারদলীয় জোট সরকার গঠন করে। মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলাতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোই ছিল দেশের সবচেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন। আর তখনই আওয়ামী লীগ সহ তাদের মিত্ররা বুঝতে পারে যে যদি আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় তাহলে তারা ক্ষমতায় আসতে পারবেনা তাই পরিকল্পিত ভাবেই ২০০৬ সালের নারকীয় ২৮শে অক্টোবরের সুত্রপাত ঘটায়। যা আমি আমার আরেকটি প্রবন্ধে আলোচনা করেছি।
এরই ধারাবাহিকতায় ১/১১ মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের অনির্বাচিত সরকার যারা দুই বছর দেশের মানুষকে শাসন করে ২০০৮ সালের ২৯ শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে ক্ষমতায় বসায়। যেটা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য তাদেরই আন্দোলনের ফসল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিচার বিভাগের মাধ্যমে সংবিধান থেকে উধাও করে দেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীনরা ভোটারবিহীন প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ শাসন করে দেশকে গণতন্ত্রবিহীন করে দেশের বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগসহ রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে। দেশকে এক অরাজকতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে যত সব অরাজকতা বিভক্তি- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তিই তার একমাত্র কারণ।
তৎপরবর্তী ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী ও ২০১৮ সালের ৩০সে ডিসেম্বরের নির্বাচন আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের একতরফা নির্বাচন ছিল। দিনের ভোট রাতে দিয়ে দেশের গনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তিতে জনগণের কোনো ম্যান্ডেট ছিল না বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে স্থান পেয়েছিল জনগণের ঐকান্তিক ইচ্ছার প্রতিফলনে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিরপেক্ষ-তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে না পারলে দেশে গণতন্ত্র চিরতরেই হারিয়ে যাবে একথা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

লেখকঃ

সাংবাদিক মো: শামিমুল হক
নির্বাহী সম্পাদক,
এম এস টিভি ইউ কে 

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *